খাগড়াছড়ির স্বনির্ভরে ৭ খুনে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে দীঘিনালায় তিন সংগঠনে বিক্ষোভ
দীঘিনালা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ১৪ আগস্ট ২০২৩
২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর বাজারে ছাত্রনেতা তপন, এল্টন ও যুবনেতা পলাশ চাকমাসহ ৭ খুনের
প্রধান হোতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল মোতালেব ও তার লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার
এবং বিচারের দাবিতে দীঘিনালায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম দীঘিনালা উপজেলা
শাখা।
উক্ত হত্যাকাণ্ডের ৫ম বার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার (১৪ আগস্ট ২০২৩) সকালে
বিক্ষোভ মিছিলের পর এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের দীঘিনালা উপজেলা সভাপতি জ্ঞান প্রসাদ
চাকমার সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক গৌতম চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড
পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর দীঘিনালা ইউনিটের সংগঠক সুজয় চাকমা, হিল উইমেন্স
ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য দয়াসোনা চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা
শাখার সহসভাপতি মিঠুন চাকমা।
বক্তারা বলেন, ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট খাগড়াছড়ি স্বনির্ভর বাজারের হত্যাকাণ্ডটি
রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনায় সংঘটিত করা হয়েছিল। এ ঘটনায় খাগড়াছড়ি সেনা ব্রিগেডের তৎকালীন ব্রিগেড
কমাণ্ডার আব্দুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ জড়িত ছিলেন। যার কারণে ঘটনাস্থলে একটি পুলিশ
ফাঁড়ি ও কিছু দূরে বিজিবির চেকপোস্ট থাকলেও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তারা কোন পদক্ষেপ
নেয়নি। সন্ত্রাসীরা আধাঘন্টার অধিক সশস্ত্র হামলা চালিয়ে একে একে ছাত্র নেতা তপন-এল্টন,
যুব নেতা পলাশ চাকমাসহ ৭ জনকে খুন করলেও পুলিশ্ ও বিজিবি সদস্যরা নিরব দর্শকের ভূমিকায়
ছিলেন।
বক্তারা ৫ বছরেও স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনি-সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার
ও ঘটনার বিচার না হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, খুনিরা প্রশাসনের নাকের
ডগায় দিনে দুপুরে ঘুরোফেরা করলেও তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। উপরন্তু এই খুনিদের
আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদ দিয়ে খুন, গুম, অপহরণসহ অব্যাহত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে।
বক্তারা রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক নিপীড়ন-নির্যাতন, বিচার বহির্ভুত হত্যা,
নারীর ওপর সহিংসতার ঘটনাও তুলে ধরেন। তারা বলেন, ২০১৯ সালে সেনাবাহিনী কর্তৃক ইউপিডিএফ
সদস্য নবীন জ্যোতি, ভুজেন্দ্র ও রুচিল চাকমাকে ধরে নিয়ে বিচার বহির্ভুতভাবে গুলি করে
হত্যা এবং ২০২২ সালে ইউপিডিএফ সংগঠক নবায়ন চাকমা মিলনকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালিয়ে
হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু এসব ঘটনারও কোন বিচার আমরা পাইনি।
তারা দীঘিনালা বাবুছড়া এলাকায় জনসাধারণের বসতবাড়ি নির্মাণে সেনাবাহিনীর
বিধি-নিষেধের বিষয়েও তাদের বক্তব্যে তুলে ধরেন।
বক্তারা ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনাবাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘনের
মূল হোতা’ উল্লেখ করে বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও জনগণের নিরাপত্তার কথা বলে সেনাবাহিনী
পাহাড়ি জনগণের ওপর পাকিস্তানী হানাদারদের কায়দায় নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে। তারা খুন,
গুম, নারী নির্যাতন, ঘরবাড়ি তল্লাশি, ভূমি বেদখলসহ প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করে
যাচ্ছে। কিন্তু তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না। ফলে পাহাড়ি জনগণ এখন চরম নিরাপত্তাহীনতার
মধ্যে জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
সমাবেশ থেকে বক্তারা স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা খাগড়াছড়ি ব্রিগেডের
সাবেক ব্রিগেড কমাণ্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদসহ ও তার
লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম
থেকে সেনাশাসন তুলে নিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধের দাবি জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।