জেল গেট থেকে গ্রেফতারের খেলা বন্ধ করা হোক
সুভেন্দু ত্রিপুরা
রাঙামাটি জেলা কারাগারের গেট। |
পার্বত্য চট্টগ্রামে
স্থুল ক্ষমতার বন্য শাসন আর কত দিন চলবে? কবে প্রতিষ্ঠিত হবে আইনের শাসন? এই প্রশ্নগুলো
তোলার কারণ হলো গত ৩ আগস্ট ২০২৩ পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি কুনেন্টু
চাকমা হাইকোর্টের জামিন নিয়ে রাঙামাটি কারাগার থেকে বের হওয়া মাত্রই নিরাপত্তা বাহিনীর
সদস্যরা তাকে পুনরায় আটক করে ব্রিগেড দপ্তরে নিয়ে যায়। সেখানে তিন দিন তাদের হেফাজতে
রাখার পর তাকে আবারও মিথ্যা অস্ত্র মামলা দিয়ে কাউখালি থানায় হস্তান্তর করা হয়। ফলে
বর্তমানে কুনেন্টুর ঠিকানা আবার রাঙামাটি কারাগারের সেই চার দেয়ালের প্রকোষ্ঠ।
কুনেন্টু চাকমাকে
ইতিপূর্বে আরও একবার জেল গেট থেকে আটক করা হয়েছিল। সেটা ছিল ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর।
তখনও তিনি আদালত থেকে জামিন পেয়েছিলেন। সে সময়ও তাকে আবার মিথ্যা মামলা দিয়ে পুনরায়
জেলে ঢোকানো হয়েছিল। তাকে প্রথম গ্রেফতার করা হয়েছিল ২০১৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। তার
মানে তিনি সাড়ে ৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে জেলে বন্দী হয়ে আছেন। একজন ছাত্রনেতা, যে কোন
অপরাধ করেনি, তাকে কেবলমাত্র একটি রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে এভাবে বছরের পর বছর জেলে
রাখা চরম অন্যায়। আমরা এটা কোনভাবেই মেনে নিতে পারি না। বিশেষত যখন মহামান্য হাইকোর্ট
থেকে জামিন লাভের পরও তাকে অন্যায়ভাবে জেলগেট থেকে ধরে নিয়ে মিথ্যা অস্ত্র মামলা দিয়ে
জেলে নিক্ষেপ করা হয়, তখন প্রশ্ন জাগে তাহলে দেশে আইন আদালত থাকার দরকার বা মানে কী?
পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষমতাবানরা কি তাহলে আইন আদালতেরও উর্ধে? জেল থেকে ছাড়া পাবার
জন্য কী তাহলে আদালতের জামিন যথেষ্ট নয়? এ প্রশ্নের উত্তর কি সরকার দেবে?
কুনেন্টু চাকমা। গত ৩ আগস্ট আদালতের জামিন নিয়ে রাঙামাটি জেলগেট থেকে বের হওয়ার সময় জেলগেট থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাকে পূনরায় গ্রেফতার করে। |
শুধু কুনেন্টু
নয়, তার আগেও অনেককে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর কারা ফটক থেকে আটক করে পুনরায় জেলে পাঠিয়ে
দেয়া হয়েছে। আমরা দেখি, একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের টার্গেট করে এই
পুনঃ গ্রেফতারের খেলা চলছে। এবং এটা সম্পূর্ণ বেআইনী, অন্যায় ও অমানবিক। এটা ক্ষমতার
চরম অপব্যবহারও বটে।
আমরা জানি, বাংলাদেশ
সংবিধানে প্রত্যেক নাগরিককে বাক্ স্বাধীনতা ও সংগঠন করার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু
পার্বত্য চট্টগ্রামে এই স্বাধীনতা ভীষণভাবে সীমিত, নেই বললেই চলে। ইউপিডিএফ নিষিদ্ধ
কোন দল নয়, নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দলটি তার কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। কিন্তু
তারপরও তাদের সকল অফিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের ঘরছাড়া
এলাকাছাড়া করা হয়েছে। ইউপিডিএফ বা তার সহযোগী সংগঠনের সদস্য হলেই তাকে গ্রেফতার করা
হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা থাক বা না থাক। আগে গ্রেফতার, তারপর মামলা – ইউপিডিএফের
সদস্যদের ব্যাপারে এই হলো সাধারণ নিয়ম। এখানে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে না, আইন চলে
ক্ষমতার পিছু পিছু। পুরো পাহাড়কে আজ অন্যায়ের পুরু চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। ন্যায়বিচার
বহু আগেই নির্বাসিত।
আমরা চাই, অচিরেই
জেল গেট থেকে গ্রেফতারের খেলা বন্ধ করা হোক।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।