পার্বত্য চট্টগ্রামে রোহিঙ্গা পুনর্বাসন জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী

সংগৃহিত ছবি


মন্তব্য প্রতিবেদন



খাগড়াছড়ির জেলার বিজিতলা-গামারিঢালায় রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের খবর কেবল
পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য উদ্বেগজনক নয়, তা পুরো বাংলাদেশের স্বার্থের পরিপন্থী।
এটা নিশ্চিতভাবে মায়ানমারসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে একটি ভুল বার্তা দেবে।



পার্বত্য চট্টগ্রামে কিংবা দেশের অন্যত্র রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করা
হলে তা মায়ানমার সরকারকে উল্লসিত করবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। এর ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের
বিষয়টি তারা আরও বেশি ঝুলিয়ে রাখতে চাইবে বা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গড়িমসি করতে
সাহিত হবে। অন্যদিকে
বাংলাদেশে পুনর্বাসনের সম্ভাবনা থাকলে রোহিঙ্গারাও তাদের দেশে ফিরে যেতে আর আগ্রহী
হবে না। কারণ তারা যদি এদেশে জমি-জীবিকা ও জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে থাকার সুযোগ পায়,
তাহলে তারা আর কখনই তাদের দেশে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কাছে ফিরে যেতে চাইবে না। এই অবস্থা
বাংলাদেশের জন্য কখনই কাম্য হতে পারে না। আমরা যেখানে নিজের দেশের জনগণের জন্য কর্ম
ও অন্ন সংস্থান করতে হিমশিম খাচ্ছি, সেখানে ১২ লক্ষ রোহিঙ্গার স্থায়ী দায় নিতে পারি
না। ইতিমধ্যে তাদের অবস্থানের কারণে স্থানীয়দের অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে,
আইনশৃঙ্খলার সমস্যা তৈরি হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে যে তাদের কারণে জাতীয় নিরাপত্তাজনিত
সমস্যা দেখা দেবে না তার তার গ্যারান্টি কে দেবে?



বাংলাদেশ সরকারের উচিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে কূটনৈতিক
পরতা জোরদার করা
এবং মায়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগের পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক আলোচনার উদ্যোগ
নেয়া। এই প্রচেষ্টার সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন চীফ ও বিশিষ্ট বৌদ্ধ ভিক্ষুদেরও
অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। তারা বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের
জন্য বার্মা সরকারকে রাজী করাতে ভূমিকা রাখতে পারেন। মনে রাখা দরকার, রোহিঙ্গা ইস্যুতে
আন্তর্জাতিক পরাশক্তি ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোর স্বার্থের সাথে আমাদের জাতীয় স্বার্থ এক
নাও হতে পারে এবং না হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।



কাজেই রাখাইন অঞ্চলের পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের জন্য কিছুটা অনুকূল হলেই
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা দরকার। কারণ রোহিঙ্গাদের দ্রুত স্বদেশে
প্রত্যাবাসন তাদের জন্য এবং একই সাথে বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনকই হবে। তাদেরকে অবশ্যই
তাদের দেশে সংগ্রাম করে বাঁচতে শিখতে হবে। অন্যের দেশে বোঝা ও দায় হয়ে থাকার চাইতে
নিজ মাতৃভূমিতে লড়াই করে টিকে থাকা অনেক শ্রেয় এবং রোহিঙ্গাদের সেটাই করতে হবে। ফিরে
গিয়ে তারা হয়ত সবকিছু সাজানো গোছানো পাবে না। কিন্তু তারা অন্ততঃ নিজ মাতৃভূমিকে
ফিরে পাবে। রোহিঙ্গাদের এ কথা বোঝাতে হবে।



আর দেশের নীতি নির্ধারকদেরও নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা মনে রাখতে হবে।
১৯৭১ সালে ভারত আমাদের দেশের এক কোটি লোককে আশ্রয় দিয়েছিল। ত
কালীন প্রধানমন্ত্রী
ইন্দিরা গান্ধী তাদের খাওয়ানোর ও ফেরত পাঠানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর
নির্ভর করেননি। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করে শরণার্থী সমস্যাটির
সমাধান করেছিলেন। বাংলাদেশ ভারতের মতো নয়, এবং ১৯৭১ সাল ও ২০২৩ সালের মধ্যে রয়েছে
বিস্তর ব্যবধান। আমাদেরকে আমাদের মতো করেই রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার সমাধান খুঁজে
বের করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের এই সমস্যাটির সমাধান করে দিতে এগিয়ে
আসবে না, বরং এই সমস্যাকে তারা তাদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চাইবে। আমাদের অবশ্যই আন্তর্জাতিক
সাহায্য ও সমর্থনের জন্য চেষ্টা করতে হবে, তবে তাদের ওপর নির্ভরশীল হওয়া চলবে না।
আমরা এই ওয়েবসাইটে ইতিপূর্বে প্রস্তাব করেছিলাম যে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে এশিয়ার
অন্যান্য দেশের সাথে ভাগাভাগি করা হোক। দেশের কোন কোন পত্রিকা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের
কোন কোন নেতাও একই রকম প্রস্তাব করেছিলেন। যতদূর মনে পড়ে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার
মতো দেশও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি অংশকে তাদের দেশে আশ্রয় দিতে চেয়েছিল। আজ যদি
সেটা করা হতো তাহলে সে সব দেশের সাথে একযোগে বার্মা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব
হতো। কারণ রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যাটি তখন কেবল বাংলাদেশের একক সমস্যা হতো না, তা যেসব
দেশ তাদের আশ্রয় দিতো তাদেরও সমস্যা হয়ে যেতো। কিন্তু আমরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে
অন্যান্য দেশের সাথে ভাগাভাগি না করে ‘সাহায্যদাতা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের’ মধুর
কথায় বিশ্বাস করেছি এবং ঠকেছি।



শেষে বলতে চাই, যারা খাগড়াছড়ির বিজিতলা-গামারিঢালায় রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে
সাহায্য করছেন, তাদের উদ্দেশ্য যেই হোক, তারা আসলে বাংলাদেশের স্বার্থের ক্ষতি করছেন।
সরকারের উচিত অবিলম্বে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা এবং তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ
নেয়া।



সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url