ছাত্র নেতা কুনেন্টু চাকমাকে জেলগেট থেকে পুনঃগ্রেফতারের ঘটনায় চার সংগঠনের নিন্দা ও প্রতিবাদ
রাঙামাটি প্রতিনিধি,
সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ৭ আগস্ট ২০২৩
হাইকোর্ট থেকে
জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি কুনেন্টু চাকমাকে সেনাবাহিনী
কর্তৃক রাঙামাটি জেলগেট থেকে পুনঃগ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে
পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত চার গণসংগঠন গণতান্ত্রিক
যুব ফোরাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও বৃহত্তর পার্বত্য
চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।
আজ সোমবার
(৭ আগস্ট ২০২৩) সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি
জিকো ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি কনিকা দেওয়ান, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের
সভাপতি নীতি চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অঙ্কন চাকমা এ নিন্দা ও
প্রতিবাদ জনান। তারা বলেন, চার বছরের অধিক কারাভোগের পর আদালত থেকে জামিন নিয়ে কারাগার
থেকে বের হওয়ার সময় ছাত্র নেতা কুনেন্টু চাকমাকে দু’দফায় জেলগেট থেকে গ্রেফতারের ঘটনা
পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকারকামী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ওপর রাষ্ট্রের সুপরিকল্পিত
নিপীড়ন-নির্যাতনেরই অংশ।
নেতৃবৃন্দ অভিযোগ
করে বলেন, দেশের উচ্চ আদালত হাইকোর্টের দেয়া জামিনের আদেশনামা দেখিয়ে গত ৩ আগস্ট ২০২৩
রাঙামাটি জেলা কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় অন্যায়ভাবে সেনাবাহিনীর সদস্যরা জেলগেট থেকে
পুনরায় কুনেন্টু চাকমাকে গ্রেফতার করে রাঙামাটি সেনা ব্রিগেডে নিয়ে যায়। সেখানে তিনদিন
আটকে রেখে নানা নিপীড়নের পর ৬ আগস্ট সকালে তাকে কাউখালী থানায় হস্তান্তর করে আরেকটি
মিথ্যা অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এর আগে ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বরে একইভাবে
তাকে জেলগেট থেকে সেনাবাহিনী কর্তৃক তুলে নিয়ে নতুন মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে প্রেরণ
করা হয়েছিল। এভাবে জেলগেট থেকে গ্রেফতার করে একটি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীর
ওপর নির্যাতন চালানো মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ
উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বঘোষিত সেনাশাসন ‘অপারেশন উত্তরণ’ ও
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দমনমূলক ১১ দফা নির্দেশনা জারি রেখে শাসকগোষ্ঠি পাহাড়ি জনগণের
ওপর শাসন-শোষণ, নিপীড়ন-নির্যাতন পরিচালনা করছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর এই নিপীড়নের হাত
থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তি, ছাত্র-শিক্ষক ও সাধারণ জনগণ কেউই রেহায় পাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত
চলছে দমন-পীড়ন, হত্যা, গুম, অপহরণ, ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতনের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের
ঘটনা। তারই ধারাবাহিকতায় ছাত্র নেতা কুনেন্টু চাকমাকে দীর্ঘ চার বছরের অধিক মিথ্যা
মামলায় রাঙামাটি জেলা কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। এছাড়াও ইউপিডিএফ কেন্দ্রীয় নেতা
আনন্দ বিকাশ চাকমাসহ অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সাধারণ জনগণ কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
কেউ আদালতের জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বের হতে গেলই ওঁৎ পেতে থাকা সেনাবাহিনীর সদস্যরা
জেলগেট থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর পুনরায় আরো একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে
প্রেরণ করা হয়। সেনাবাহিনী এ ঘৃণ্য কার্যকলাপ ২০১৯ সাল থেকে শুরু করে দীর্ঘ চার বছর
ধরে অব্যাহত রেখেছে বলে নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন।
নেতৃবৃন্দ আরো
বলেন, দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আদালতের জামিন নিয়ে কারাগার থেকে মুক্তি লাভের অধিকার
সবার রয়েছে, রাষ্ট্রের সংবিধানেও তা উল্লেখ আছে। কিন্তু রাঙামাটি ব্রিগেডের সেনাবাহিনী
দেশের উচ্চ আদালদের দেওয়া আদেশনামা ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নাগরিকের
সাংবিধানিক অধিকারকে ভূলুণ্ঠিত করে জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত নেতা-কর্মীদের জেলগেট থেকে
গ্রেফতার করছে, যা আইনের প্রতি অবমাননা ছাড়া আর কিছুই নয়।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ,
পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে সরকার বিরোধী মত দমনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের
অন্যায়ভাবে গ্রেফতার, নির্যাতন ও জেলগেট থেকে পুনঃগ্রেফতার বন্ধসহ সকল মানবাধিকার লঙ্ঘন
বন্ধ করা, হাইকোর্টের জামিন আদেশ মেনে অবিলম্বে ছাত্র নেতা কুনেন্টু চাকমাকে মুক্তি
দেয়ার দাবি জানান।
একই সাথে তারা
বল প্রয়োগের মাধ্যমে দমন নীতি পরিহার করে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে রাজনৈতিকভাবে
সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বিগত
২০১৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটির কুদুকছড়িতে সাংগঠনিক কাজে থাকা অবস্থায় সেনাবাহিনী
পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি কুনেন্ট চাকমাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে থানায় হস্তান্তর
করে। এ সময় অস্ত্র ও চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে রাঙামাটি কারাাগরে পাঠানো হয়।
এরপর ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ও গত ৩ আগস্ট ২০২৩ দু’দফায় আদালতের জামিন আদেশের পর
কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে জেলগেট থেকে তাকে গ্রেফতার
করে নতুন মিথ্যা মামলা দিয়ে পুনরায় জেলে প্রেরণ করেছে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।