হিরাচর-সার্বোতলী ও পাবলাখালী গণহত্যার ৩৫ বছর উপলক্ষে দীঘিনালায় স্মরণসভা
হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও খুনিদের ফাঁসির দাবি
দীঘিনালা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বুধবার, ৯ আগস্ট ২০২৩
১৯৮৮ সালের ৮-১০ আগস্টের মধ্যে রাঙাামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার হিরাচর-সার্বোতলী
ও পাবলাখালী গণহত্যার ৩৫ বছর উপলক্ষে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে উক্ত হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও খুনিদের ফাঁসির দাবি জানানো হয়েছে।
আজ বুধবার (৯ আগস্ট ২০২৩) সকাল সাড়ে ১১টার সময় ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী
সংগঠনসমূহের উদ্যোগে এই স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।
স্মরণসভার শুরুর আগে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা
হয়।
“নতুন প্রজন্ম বজ্র কণ্ঠে জেগে ওঠো” শ্লোগানে ইউপিডিএফ সংগঠক অতুল চাকমার
সভাপতিত্বে ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের দীঘিনালা উপজেলা সভাপতি জ্ঞান প্রসাদ চাকমার
সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন ৪নং দীঘিনালা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান
ও শিক্ষক শাক্য মনি চাকমা, একই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার নন্দ প্রিয় চাকমা, দীঘিনালা
ভূমি রক্ষা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক টত্তমুনি চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয়
সদস্য দয়াসোনা চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহসভাপতি মিঠুন চাকমা।
সভায় সাবেক চেয়ারম্যান শাক্যমনি চাকমা বলেন, পাহাড়ে এ পর্যন্ত বহু গণহত্যা
সংঘটিত হয়েছে। এসব ঘটনার কোন সুবিচার পাওয়া
যায়নি। আমাদের অবশ্যই এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে হবে। তার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ
হওয়া খুবই জরুরী। আমাদের সমাজ ও দলগুলোর মধ্যে ঐক্য না থাকায় আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা
হচ্ছে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার করার জন্য সব দলকে রেষারেষি মনোভাব
পরিহার করে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে গিয়ে সকল বাধা অতিক্রম করার আহ্বান জানান।
পিসিপি নেতা মিঠুন চাকমা বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে পার্বত্য
চট্টগ্রামে ডজনের অধিক গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে হিরাচর,
সার্বোতলি ও পাবলাখালি এলাকায় সংঘটত গণহত্যার ঘটনাও। এতে অন্তত ৫৪ জনকে হত্যা, বেশ
কয়েকজন নারীকে ধর্ষণ ও কয়েকটি পাহাড়ি গ্রামে ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযাগ করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, আমার জন্ম ৮৮ সালে না হলেও সংগঠন করার কারণে ইতিহাস পার্বত্য
চট্টগ্রামে সংঘটিত গণহত্যাসহ নানা অন্যায়-অবিচারের ইতিহাস সম্পর্কে জানি। এই সব হত্যাকাণ্ড
সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্মের ছাত্র-যুব ও নারী সমাজকে জানতে হবে। নিজ জাতির উপর সংঘটিত
অন্যায়-অবিচার সম্পর্কে জেনে আমাদের জাতির অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই জোরদার করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর রাজত্ব কায়েম হয়েছে।
ফলে এখানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই বললেই চলে। সেনাবাহিনী নিপীড়ন-নির্যাতন, হত্যাকাণ্ড
ছাড়াও নিজেদের ইচ্ছেমত পাহাড়িদের ঐতিহাসিক নামগুলো মুছে দিয়ে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন জারি
রেখেছে। তারা অন্যান্য বহু এলাকার ন্যায় খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার লোগাং নামেরও বিকৃতি
ঘটিয়ে তাদের সাইনবোর্ডে ‘লোগান’ লিখেছে। এভাবে তারা নানাভাবে পাহাড়িদের নিশ্চিহ্ন
করে দিতে চায়।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনী ও শাসকগোষ্ঠির এসব অন্যায়-অবিচার ও আগ্রাসনের
বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজ রুখে না দাঁড়ালে ভবিষ্যতে পাহাড়ি জাতির অস্তিত্ব সংকট থেকে আরো
সংকটে পতিত হবে। তাই এসব থেকে জাতিকে রক্ষার জন্য ছাত্র, যুবক, নারী, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী,
ধর্মীয় গুরুসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
দয়া সোনা বলেন, ১৯৮৮ সালের ৮-১০ আগস্টের মধ্যে সেনাবাহিনী ও সেটলার বাঙালিরা
হিরাচর, সার্বোতলী ও পাবলাখালী এলাকায় পাহাড়িদের গ্রামে আক্রমণ চালায় ও নারীসহ অর্ধশতাধিক
মানুষকে হত্যা করে, নারীদের ধর্ষণ করে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, এ হত্যাকাণ্ডের
৩৫ বছরেও আজো কোন তদন্ত ও বিচার হয়নি। অন্যদিকে এই শোকের দিনকে ভুলিয়ে দিতে একটি গোষ্ঠি
‘আদিবাসী দিবস’ পালনের নামে রঙ্গ-তামাশা করে থাকে।
প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ যাবত যত গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে তার কোন ঘটনার বিচার তো
দূরে থাক, তদন্তও হয়নি। উপরন্তু এসব ঘটনা ধামাচাপা দিতে সেনা-শাসকগোষ্ঠি নানা কৌশল
অবলম্বন করে থাকে। তাই আমাদের নতুন প্রজন্মকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডসহ
অন্যায়-অবিচার সম্পর্কে জানতে হবে। অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ইতিহাসই সাক্ষী হিসেবে কাজ
করে।
তিনি নারী সমাজসহ ছাত্র, যুব ও সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে জাতির অস্তিত্ব
রক্ষার সংগ্রামে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সমাবেশ থেকে বক্তারা ১৯৮৮ সালে বাঘাইছড়ির খেদারমারা ইউপি ও সার্বোতলি
ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে সংঘটিত হামলা, ধর্ষণ ও অর্ধশতাধিক লোককে হত্যার ঘটনা সুষ্ঠু
তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনায় জড়িত হামলাকারী-খুনিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চা
সাজা ফাঁসির দাবি জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।