খাগড়াছড়ির স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডের ৫ বছর উপলক্ষে রামগড়ে পিসিপির স্মরণসভা

রামগড় প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বুধবার ১৬ আগস্ট ২০২৩


রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসী
কর্তৃক ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর বাজারে সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের
৫ম বার্ষিকী উপলক্ষে রামগড়ে স্মরণসভা করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র
পরিষদ (পিসিপি), রামগড় উপজেলা শাখা।



আজ বুধবার (১৬ আগস্ট ২০২৩) সকালে এই স্মরণসভা
অনুষ্ঠিত হয়। এতে ছাত্র-ছাত্রী, যুবসমাজসহ 
এলাকার লোকজন অংশগ্রহণ করেন।



স্মরণসভা শুরুতে তপন, এল্টন, পলাশসহ এ
যাবত অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যারা আত্মবলিদান দিয়েছেন সেই বীর শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে
এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।


“ভাড়াটে দিয়ে খুন করা যায়, চেতনাকে খুন
করা যায় না; শহীদ তপন-এল্টন-পলাশদের আত্মবলিদানে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াই হবে আরও
জোরদার
” শ্লোগানে আয়োজিত স্মরণসভায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রামগড় উপজেলা শাখার সভাপতি
অসীম চাকমার সভাপতিত্বে ও সদস্য রাজু ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক
নিঠু চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রামগড় উপজেলা শাখার সভাপতি জার্মেন্ট ত্রিপুরা
ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রামগড় উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তৈমাং ত্রিপুরা।


স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে
পাহাড়ি জনগণের ন্যায্য দাবি পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে নস্যাৎ করে দেয়ার লক্ষ্যে
২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর বাজারে নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা
হয়েছিল। সেদিন রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদপুষ্ট নব্যমুখোশ-সংস্কারপন্থী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা
প্রকাশ্যে দিবালোকে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে পিসিপি নেতা তপন, এল্টন, যুবনেতা পলাশসহ ৬
জনকে ও স্বনির্ভরের অদূরে পেরাছড়ায় একজনকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। কিন্তু সন্ত্রাসীরা
আধা ঘন্টার মতো সশস্ত্র তাণ্ডব চালালেও ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ-বিজিবি সদস্যরা সন্ত্রাসীদের
বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে এবং সন্ত্রাসীদের পালিয়ে
যেতে সহযোগীতা দেয়।


বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, সেদিন হত্যাকাণ্ডে
নিয়োজিত সন্ত্রাসীদেরকে খাগড়াছড়ি সেনা ব্রিগেডের তৎকালীন ব্রিগেড কমাণ্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল
আব্দুল মোতালেব লেলিয়ে দিয়েছিলেন। তার পরিকল্পনায় সন্ত্রাসীরা উক্ত নৃশংস হত্যাকাণ্ডটি
সংঘটিত করেছিল।



বক্তারা দীর্ঘ ৫ বছরেও হত্যাকাণ্ডে জড়িত
সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার না করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, খুনী-সন্ত্রাসীরা
প্রকাশ্যে প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘোরাফেরা করলেও পুলিশ তাদের দেখেও না দেখার ভাণ করে
রয়েছে। উপরন্তু সন্ত্রাসীদের মদদ ও আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে খুন-গুম, অপহরণসহ নানা সন্ত্রাসী
কাজে লেলিয়ে দিচ্ছে।


স্মরণসভায় বক্তারা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত
করে বলেন, ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে তপন, এল্টন, পলাশদের খুন করা গেলেও তারা যে চেতনাকে
ধারণ করেছিলেন সে চেতনাকে ধ্বংস করা যায়নি। তাদের আত্মবলিদান থেকে শক্তি সঞ্চয় করে
তরুণ প্রজন্ম পূর্ণস্বাত্তশাসনের আন্দোলনকে আরো বেগবান করবে।



বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসকগোষ্ঠির
অন্যায় দমন-পীড়ন, খুন-গুম, বিচার বহির্ভুত হত্যা, ভূমি বেদখলসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের
বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর জন্য ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।



স্মরণসভা থেকে বক্তারা অবিলম্বে স্বনির্ভর
হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা খাগড়াছড়ি ব্রিগেডের সাবেক ব্রিগেড কমাণ্ডার আব্দুল মোতালেবসহ
ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারপূর্বক বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।



সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url