কাপ্তাইয়ে মারমা কিশোরীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদ জানিয়ে কুদুকছড়িতে লাঠি ও ঝাড়ু মিছিল

রাঙামাটি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩


রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী মারমা কিশোরীকে ৬ সেনা সদস্যের
দ্বারা গণধর্ষণ ও রামগড়ে সেটলার বাঙালি কর্তৃক পাহাড়ি গৃহবধুকে ধর্ষণ চেষ্টার প্রতিবাদে
এবং দোষী ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে রাঙামাটি সদর উপজেলার
কুদুকছড়িতে লাঠি ও ঝাড়ু মিছিল করেছে চার সংগঠন।



আজ বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩) বিকালে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স
ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের রাঙামাটি জেলা শাখা
সমুহের উদ্যোগে লাঠি ও ঝাড়ু নিয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলের পর তারা প্রতিবাদ
সমাবেশ করেন।



সমাবেশে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক নিশি চাকমার সঞ্চালনায়
ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের রাঙামাটি জেলা সভাপতি রিনিসা চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য
রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলা সভাপতি রিমি চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের
রাঙামাটি জেলা সভাপতি রিপন আলো চাকমা ও গনতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি
ধর্মশিং চাকমা।


সমাবেশে বক্তারা বলেন, কথিত শান্তি, সম্প্রীতি উন্নয়নের নামে পার্বত্য
চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনাবাহিনী পাহাড়িদের জাতীয় অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়ার ষড়যন্ত্র
করছে। তারা অন্যায় দমন-পীড়ন, ধরপাকড়, বিচারবহির্ভুত হত্যা, ভূমি বেদখল ছাড়াও নারী ধর্ষণের
মতো জঘন্য ঘটনা সংঘটিত করছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর কাপ্তাইয়ের রাইখালীতে কিশোরীকে গণধর্ষণ ও ২০১৮ সালে বিলাইছড়িতে দুই মারমা বোনকে ধর্ষণ-যৌন নিপীড়ন ও ’৯৬ সালে কল্পনা চাকমাকে
অপহরণের ঘটনা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অত্যাচারকেও ছাড়িয়ে গেছে বলে বক্তারা মন্তব্য
করেন এবং বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ এই অন্যায়-অত্যাচার আর সহ্য করবে না।



বক্তারা ধর্ষণকারী চক্র কাপ্তাইয়ের গণধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে অপচেষ্টা
চালাচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, ইতোমধ্যে মিতিঙাছড়ি এলাকায় সেনা অপারেশন চালিয়ে জনগণকে ভীতসন্ত্রস্ত
করা হয়েছে। ভুক্তভোগীর পরিবার ও এলাকার মুরুব্বীদের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং ভূক্তভোগী কিশোরীকে ঘটনা অস্বীকার করে বক্তব্য দিতে বাধ্য করে নাটক সাজানো হয়েছে। তারা বলেন, এ ধরনের অপচেষ্টা
শুধু আজকের নয়, সেই কল্পনা চাকমা অপহরণ থেকে শুরু করে বিলাইছড়ির ঘটনায়ও একই অপচেষ্টা
চালানো হয়েছে। বিলাইছড়ির ভূক্তভোগী দুই বোনের চিকিৎসা সহায়তা দেয়ায় চাকমা রানী ইয়ান
ইয়ানকেও লাঞ্ছিত হতে হয়েছে।  



বক্তারা কাপ্তাই ও রামগড়ে একই দিন সংঘটিত গণধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা
কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় উল্লেখ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত নিপীড়ন হিসেবে
নারী নির্যাতনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যার কারণে সেনা কমর্কর্তা লে. ফেরদৌস
গঙ কর্তৃক নারী নেত্রী কল্পনা চাকমাকে অপহরণ থেকে শুরু করে সেনা-সেটলার কর্তৃক এ যাবত
যত ধর্ষণ, ধর্ষণের পর খুন ও যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে তার কোনটিরই সুষ্ঠূ বিচার ও জড়িত
অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়নি।



বক্তারা শাসকগোষ্ঠির এসব অন্যায়-অবিচার ও ধর্ষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে
রুখে দাঁড়াতে ইউপিডিএফের পতাকাতলে সমবেত হয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য ছাত্র-যুবক-নারী
সমাজসহ সকলের প্রতি আহ্বান জানান।



সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে কাপ্তাইয়ে সংঘটিত গণধর্ষণের ঘ্টনা সুষ্ঠু
ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত সেনা সদস্যদের আইনের আওতায় এনে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক
শাস্তি, রামগড়ে পাহাড়ি নারীকে ধর্ষণ চেষ্টাকারী রহমত উল্ল্যাহ উপযুক্ত সাজা নিশ্চিত
করার দাবি জানান।



সমাবেশ শেষে উপস্থিত কিশোর-কিশোরীরা গণধর্ষণকারীদের প্রতীকী কুশপুত্তলিকায়
লাঠি দিয়ে আঘাত করে কাপ্তাইয়ে গণধর্ষণের ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান।




সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url