সেনাবাহিনীর সহযোগীতায় মানিকছড়ি-ফটিকছড়ি সীমান্তে নব্য মুখোশ দুর্বৃত্তদের সশস্ত্র তৎপরতা!

মানিকছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩


খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি ও চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী ভূত্তোছড়ি,
বটতলী, নতুন পাড়া, জরজরি, চাইল্যাচর এলাকায় সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় তাদের
সৃষ্ট নব্যমুখোশ দুর্বৃত্তদের সশস্ত্র তৎপরতার খবর পাওয়া গেছে। সন্ত্রাসীরা বটতলী,
ভুত্তোছড়ি, নতুন পাড়া ও জরজরি এলাকায় বসবাসরত বাঙালিদের বাড়িতে সশস্ত্রভাবে অবস্থান
করে চাঁদাবাজিসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।



উক্ত এলাকাটি কিছু অংশ মানিকছড়ির যোগ্যাছোলা ইউনিয়নে এবং কিছু অংশ ফটিকছড়ির
পাইন্দং ও কাঞ্চননগর ইউনিয়নের অন্তর্গত। এটি খাগড়াছড়ি – চট্টগ্রাম সড়কের গাড়িটানার
পূর্বপাশে অবস্থিত। আর দক্ষিণ দিকের কিছু দূরে রয়েছে নয়াবাজার আর্মি ক্যাম্প। এটি লক্ষ্মীছড়ি
সেনাজোনের অধীন একটি ক্যাম্প। মূলত লক্ষ্মীছড়ি জোনের পরিকল্পনা অনুসারে এই নয়াবাজার
আর্মি ক্যাম্প থেকে নব্যমুখোশ দুর্বৃত্তদের প্রয়োজনীয় সহযোগীতা প্রদান করা হয় বলে জানা
গেছে।



স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে, বেশ কিছু সময় ধরে নব্যমুখোশ দুর্বৃত্তদের
একটি সশস্ত্র দল ওই এলাকায় অবস্থান করে নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। নব্যমুখোশদের
সাথে এখন বেশ কয়েকজন বাঙালিও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়েছে।



বাঙালিদের মধ্যে যারা নব্যমুখোশদের সাথে যুক্ত হয়েছে তাদের কয়েকজন হলেন-
মো. রমজান আলী (বটতলী পাড়া), মো. ইয়াছিন (নয়া মসজিদ), মো. মোমিন, মো. ফুলমিয়া, মো.
কালাম, মো. এরফান, মো. আলী। এদের বাড়িগুলোকেই মূলত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডর আস্তানা হিসেবে
ব্যবহার করা হচ্ছে।



সন্ত্রাসী দলটির পরিচালনার দায়িত্বে জ্যোতিষ দেওয়ান, সুইথোঅং মারমা
(সাবেক মেম্বার), রবিন ও রমজান আলীর নাম জানা গেছে। এর মধ্যে জ্যোতিষ দেওয়ানের বাড়ি
লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার দুল্যাতলী ইউনিয়নের দেওয়ান পাড়ায়, সুইথোঅং মারমার বাড়ি একই ইউনিয়নের
দুল্যাতলী গ্রামে। রবিন নামে ব্যক্তিটির সঠিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। রমজান আলীর বাড়ি উপরে
উল্লেখ করা হয়েছে।



এই সন্ত্রাসীরা এখন এলাকার জনগণকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, হুমকি-ধমকি, জোরপূর্বক
চাঁদা আদায়, অপহরণসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। আর তাদের সহযোগীতা দিচ্ছে
সেনাবাহিনী।



গত ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার সকালে এই নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীরা নয়াবাজার
আর্মি ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর একদল সদস্যকে সাথে নিয়ে চাইল্যাচুর গ্রামে হানা দেয়।
এ সময় তারা্ ওই গ্রামের বাসিন্দা মেদু মারমা ও তার দুই ছেলে উচাইরি মারমা ও কংচাইরি
মারমার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। ৫ দিনের মধ্যে উক্ত চাঁদা দিতে ব্যর্থ
হলে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার হুমকি দেয়।



এর আগের দিন (মঙ্গলবার) সন্ত্রাসীরা চাইল্যাচর, বটতলা, ভুত্তোছড়ি এলাকায়
লোকজনকে মিটিংয়ের নামে ডেকে ২৩ জন পুরুষ ও ৪ জন নারীসহ ২৭ গ্রামবাসীকে জিম্মি করে দিনভর
হয়রানি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি-ধমকি দেয়। তাদেরকে কোন কিছুই খেতে দেওয়া হয়নি। পরে
বিকাল ৫টার সময় ছেড়ে দেয়। সন্ত্রাসীরা গ্রামবাসীদেরকে তাদের কথা না শুনলে  ‘অস্ত্র’ ও 
‘মাদক’ গুজে দিয়ে সেনাবাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেয়ারও হুমকি প্রদান করে। তারা উচাইরি
মারমা (৩৫), কংচাইরি মারমা (৩০)-কে আগামী ৫ দিনের মধ্যে পারিবার ও আত্মীয় স্বজনসহ এলাকা
ছেড়ে চলে যাবার নির্দেশ দেয়।



সন্ত্রাসীদের এমন কর্মকাণ্ডের ফলে বর্তমানে এলাকার লোকজন আতঙ্ক ও উদ্বেগের
মধ্যে রয়েছেন বলে জানা গেছে। সন্ত্রাসীরা তাদেরকে অহেতুক হয়রানি, নির্যাতন করতে পারে
বলে তারা আশঙ্ক প্রকাশ করেছেন।



এমতাবস্থায় এলাকাবাসী নব্যমুখোশ দুর্বত্তদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধে
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।



উল্লেখ্য, এই নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীরা এ বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে অস্ত্রের
জোর খাটিয়ে ফটিকছড়ির কাঞ্চননগর ইউনিয়নে
অবস্থিত বনবিভাগের ধুরুং বনবিট-এর বাগানের গাছ কেটে সাবাড় করেছিল। এ নিয়ে তখন সিএইচটি
নিউজে খবর প্রকাশিত হলে সেনাবাহিনী বটতলীর রমজান আলীর বাড়ি থেকে অস্ত্রসহ কতিপয় দুর্বৃত্তকে
আটকও করেছিল। পরে আটককৃতদেরকে ‘মগ পার্টি’ হিসেবে প্রচার করা হয়। কিন্তু সন্ত্রাসী
কর্মকাণ্ডে জড়িত রমজান আলীসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বর্তমানে এই রমজান
আলীসহ নব্যমুখোশ দর্বৃত্তরা এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করছে।



 


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url