ছাত্রনেতা কুনেন্টু চাকমাকে পুনঃগ্রেফতারের প্রতিবাদে ও স্বনির্ভরে ৭ খুনের বিচার দাবিতে কাউখালীতে বিক্ষোভ
কাউখালী প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বুধবার, ১৬ আগস্ট ২০২৩
জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত ছাত্রনেতা কুনেন্টু
চাকমাকে জেলগেট থেকে পুনরায় সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতারের প্রতিবাদে এবং ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট খাগড়াছড়ির স্বনির্ভরে ৭ খুনের
ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে রাঙামাটির কাউখালীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বুধবার (১৬ আগস্ট ২০২৩) বৃহত্তর পার্বত্য
চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের
কাউখালী উপজেলা শাখার যৌথ উদ্যোগে এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়।
কাউখালী উপজেলার কচুখালী হতে আজ বেলা ২টায়
একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে কাউখালী উপজেলা
সদরের ফায়ার সার্ভিসের সামনে গিয়ে এক প্রতিবাদ সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কাউখালী উপজেলা
শাখার সভাপতি থুইনুমং মারমা সভাপতিত্বে ও পিসিপির কাউখালী উপজেলা শাখার সভাপতি দিপায়ন
চাকমা সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, পিসিপির রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক
তনুময় চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলা সভাপতি রিমি চাকমা ও পিসিপির কাউখালী
উপজেলার সাধারণ সম্পাদক কহিন চাকমা।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাষ্ট্রীয়
বাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা দিন দিন বেড়ে চলেছে। খুন, গুম, বিচার বর্হিভূত
হত্যা, নারী নির্যাতন, অন্যায় গ্রেফতার প্রতিনিয়ত ঘটছে। আমাদেরকে বাপ-দাদার ভিটে মাটি
থেকে উচ্ছেদ করে অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়ার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র একের পর এক ষড়যন্ত্র
করে যাচ্ছে।
তারা বলেন, মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত
ছাত্রনেতা কুনেন্টু চাকমাকে হাইকোর্ট থেকে জামিনে কারামুক্তির পরে রাঙামাটি জেলগেট
থেকে সেনা-গোয়েন্দা কর্তৃক পুনরায় আটক করা হয়েছে। তাকে তিন দিন রাঙামাটি সেনা ব্রিগেডে
আটক রাখার পর অস্ত্র গুজে দিয়ে কাউখালী থানায় হস্তান্তর করে মিথ্যা অস্ত্র মামলা দিয়ে
আবার জেলে অন্তরীণ করা হয়েছে।
বক্তারা প্রশ্ন রেখে বলেন, একজন কারাবন্দির
হাতে এই অস্ত্র কোথা থেকে এলো? এ অস্ত্র নিঃসন্দেহে সেনা-গোয়েন্দাদের অবৈধ অস্ত্র।
সেনা-প্রশাসন নিজেদের অবৈধ অস্ত্র গুজে দিয়ে এভাবে রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ জনগণের
ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে। হাইকোর্টের জামিন আদেশে কারামুক্ত ছাত্র নেতা কুনেন্টু চাকমাকে
জেলগেট থেকে গ্রেফাতারের মাধ্যমে সেনাবাহিনী দেশের প্রচলিত আইন-আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি
দেখিয়ে যাচ্ছে।
বক্তারা আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে
জাতিসত্তাগুলোকে নেতৃত্বহীন করার জন্য একের পর এক নেতা কর্মী হত্যায় মেতে উঠেছে শাসকগোষ্ঠি।
২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট খাগড়াছড়ি সেনা ব্রিগেডের তৎকালীন ব্রিগেড কমাণ্ডার আব্দুল মোতালেবের
পরিকল্পনায় নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর বাজারে নারকীয়
হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ ফাাঁড়ি ও বিজিবি হেডকোয়ার্টোরের চেকপোস্ট
থাকা সত্ত্বেও সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র তাণ্ডব চালিয়ে ৭ জনকে হত্যা করলেও সন্ত্রাসীদের
গ্রেফতারে সেদিন পুলিশ কোন ভূমিকা পালন করেনি।
বক্তারা বলেন, শত হত্যা, গুম করে, দমন-পীড়ন
চালিয়ে ও মিথ্যা মামলা দিয়ে জুম্ম জনগণের ন্যায্য আন্দোলন দমন করা যাবে না। যতই অত্যাচার-নিপীড়ন
চালানো হবে ততই পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিকামী জনগণের আন্দোলন আরো বেগবান হবে।
সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে সকল মিথ্যা
মামলা প্রত্যাহারপূর্বক ছাত্রনেতা কুনেন্টু চাকমাকে নিঃশর্ত মুক্তি, জেলগেট থেকে পুনঃগ্রেফতার
বন্ধ করা এবং খাগড়াছড়ির স্বনির্ভরে ৭ খুনের মূল হোতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল মোতালেব
ও তার লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।