স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে খাগড়াছড়িতে তিন সংগঠনের বিক্ষোভ মিছিল
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ১৮ আগস্ট ২০২৩
খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডের প্রধান হোতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল
আব্দুল মোতালেব ও তার লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে খাগড়াছড়িতে
বিক্ষোভ মিছিল করেছে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন
।
আজ ১৮ আগস্ট ২০২৩, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডের ৫
বছর উপলক্ষে খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়।
মিছিল পরবর্তী অনুষ্ঠিত সমাবেশে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক
রূপান্ত চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা
শাখার সহ-সভাপতি লিটন, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার আহ্বায়ক এন্টি
চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি শান্ত চাকমা ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ২০১৮ সালের আজকের দিনে সেনাবাহিনীর লেলিয়ে দেয়া
জেএসএস সংস্কারবাদী ও নব্য মুখোশ সন্ত্রাসী কর্তৃক স্বনির্ভর বাজারে প্রকাশ্য দিবালোকে
পুলিশের সম্মুখে গুলি করে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা তপন, এল্টন, যুব ফোরামের নেতা
পলাশ চাকমা, উত্তর খবংপুজ্জে গ্রামের বাসিন্দা জিতায়ন চাকমা, ছাত্র রূপম চাকমা ও প্রকৌশলী
ধীরাজ চাকমাকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। একই দিন সন্ত্রাসীরা পেরাছড়ায় বিক্ষোভকারী জনসাধারণের
ওপর হামলা চালালে আহত হয়ে ৭০ বছরের বৃদ্ধ শান কুমার চাকমা হাসপাতালে মারা যান।
বক্তারা খাগড়াছড়ি সেনা ব্রিগেডের তৎকালীন ব্রিগেড কমাণ্ডার আব্দুল মোতালেব
সাজ্জাদ মাহমুদকে স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তার পরিকল্পনায়
সেদিন সংস্কারবাদী-নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীরা স্বনির্ভরে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে উক্ত নৃশংস
হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছিল। যার কারণে ঘটনার ৫ বছরেও আজো সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা
হয়নি।
বক্তারা আরও বলেন, শাসকগোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে পার্বত্য
চট্টগ্রামে পাহাড়িদের অস্তিত্ব ধ্বংস করতে একের পর এক ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। পাহাড়িদের
মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে জুম্ম দিয়ে জুম্ম ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। তাই
অংশ হিসেবে সংস্কারবাদী-নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ড চালানো
হয়েছে। এর আগে একই বছর ৩ জানুয়ারি উক্ত সন্ত্রাসীরা ইউপিডিএফের অন্যতম সংগঠক মিঠুন
চাকমাকে হত্যা করেছিল। এভাবে হত্যা, দমন-পীড়ন চালিয়ে পাহাড়িদের ন্যায্য আন্দোলনকে দমানোর
অপচেষ্টা চলছে।
বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি ভয়াবহ
রূপ নিয়েছে উল্লেখ করে বলেন, সরকার ও তার নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনী কর্তৃক প্রতিনিয়ত
জনগণের ওপর দমনপীড়ন, অন্যায় গ্রেফতার, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, হত্য, গুম, নারী নির্যাতন,
ভূমি বেদখলের ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। সভা, সমাবেশসহ জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর
হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। জনগণ সুষ্ঠু বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হাইকোর্টের জামিনে
কারামুক্ত ছাত্র নেতা কুনেন্টু চাকমাকে রাঙামাটি জেলগেট থেকে সেনাবাহিনী কর্তৃক পূনরায়
গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলা দিয়ে আবারের কারাগারে অন্তরীণ করা হয়েছে। পাহাড়ি নারী নেত্রী
কল্পনা চাকমাকে অপহরণের ঘটনায় জড়িত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা লে. ফেরদৌস গংদের গ্রেফতার
না করে দীর্ঘ ২৭ বছরের অধিক সময় ধরে নানা টালবাহানা করা হচ্ছে।
বক্তারা শাসকগোষ্ঠির অন্যায়-অবিচার ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে
রুখে দাঁড়ানোর জন্য ছাত্র, যুব ও নারী সমাজসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ব্রিগেডিয়ার
জেনারেল আব্দুল মোতালেবসহ তার লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক
সাজা নিশ্চিত করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহারপূর্বক সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক
পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান।