কাপ্তাইয়ে সেনা সদস্য কর্তৃক গণধর্ষণের প্রতিবাদে দীঘিনালায় দুই নারী সংগঠনের লাঠি ও ঝাড়ু মিছিল

দীঘিনালা প্রতিনিধি,
সিএইচটি নিউজ

শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর
২০২৩
 


রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে ৬ সেনা সদস্য কর্তৃক
এসএসসি পরীক্ষার্থী এক পাহাড়ি ছাত্রীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে ও ধর্ষকদের দ্রুত গ্রেফতার
ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় লাঠি ও ঝাড়ু মিছিল করেছে হিল উইমেন্স
ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, দীঘিনালা উপজেলা শাখা।



আজ শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩) সকাল
সাড়ে ৯টায় দীঘিনালা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে থেকে দুই নারী সংগঠনের নেতা-কর্মী,
সমর্থক ও এলাকার নারীরা ঝাড়ু ও লাঠি সহকারে একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি কার্বারি
টিলা, আনসার চেকপোস্ট ও উদোল বাগান স্কুল এলাকা হয়ে বাবুূছড়া সড়কের বাঘাইছড়ি সুপারি বাগান এলাকার চৌরাস্তার মোড়ে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। এতে প্রায় ৭ শ’ জনের মতো নারী অংশগ্রহণ
করেন।


সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের
দীঘিনালা উপজেলা শাখার সভাপতি কনিকা চাকমার সভাপতিত্বে ও মিতালি চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য
রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সদস্য উজ্জ্বলা চাকমা ও হিল উইমেন্স
ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য এন্টি চাকমা।


এন্টি চাকমা তার বক্তব্যে বলেন, কাপ্তাইয়ের
রাইখালিতে ৬ সেনা সদস্য কর্তৃক একজন এসএসসি পরীক্ষার্থী ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে।
এ ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা জানা নেই। যে রাষ্ট্রীয় বাহিনী আমাদেরকে নিরাপত্তা দেয়ার
কথা, তারাই আজ আমার বোনকে গণধর্ষণ করেছে। ২০১৮ সালে বিলাইছড়িতেও সেনাবাহিনীর সদস্য
কর্তৃক দুই মারমা বোনকে ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ঘটেছিল।


তিনি বলেন, কাপ্তাইয়ে গণধর্ষণের শিকার
ছাত্রীর অভিভাবকদের সেনা ক্যাম্পে ডেকে ঘটনা ধামাচাপা দিতে হুমকি দেয়া হয়েছে। পার্বত্য
চট্টগ্রামে এভাবে ঘটনাগুলো ধামাচাপা দেয়া হয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।



তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী
একজন নারী হয়েও পার্বত্য চট্টগ্রামে যে মা-বোনেরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে তার কোন বিচার
কেন হচ্ছে না?



হিল উইমেন্স ফেডারেশনের এই নেত্রী আরো
বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শুধূ সেনাবাহিনী নয়, সেটলার বাঙালি কর্তৃকও মা বোন ধর্ষণের
শিকার হচ্ছে। নিজ বাড়িতেও পাহাড়ি নারীদের সেটলার কর্তৃক ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার হতে
হয়, পানি আনতে গেলে ধর্ষণের শিকার হতে হয়। তাহলে নারীদের নিরাপত্তা কোথায়? এই যে পাহাড়ে
যুগ যুগ ধরে ধর্ষণ, নিপীড়ন চলছে তার কোন ঘটনারই আমরা বিচার পাচ্ছি না। এই বিচার না
পাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে এখানে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ষড়যন্ত্র ও নীলনক্সা।


তিনি বলেন, ধর্ষণ, নির্যাতন করে পার্বত্য
চট্টগ্রামের নারীদেরকে চুপ করে রাখা যাবে না। এই পার্বত্য চট্টগ্রাম আমাদের, এখানে
আমাদের জায়গা-জমি, ঘরবাড়ি রয়েছে। আমরা আমাদের জায়গা-জমি ও নিজেদের রক্ষার জন্য এভাবে
রাজপথে ঝাড়ু মিছিল করবো, লড়াই চালিয়ে যাবো।



পার্বত্য চট্টগ্রামে শুধু ধর্ষণ নয়, বিভিন্ন
স্থানে আমাদের জায়গা-জমি কেড়ে নেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বান্দরবানসহ তিন জেলার
সীমান্তবর্তী এলাকায় জায়গা কেড়ে নেয়া হচ্ছে। পর্যটনের নামে জায়গা দখল করা হচ্ছে। আর
আমাদের জায়গা দখল করে সেখানে সেটলার বসানো হচ্ছে। এই দীঘিনালায় সাধনাটিলা বনবিহারের
জায়গা বেদখলের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিজিবি ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার স্থাপনের মাধ্যমে
২১ পরিবার পাহাড়িকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।



তিনি বলেন, আমাদের নিজেদের জায়গা-জমি,
নিজেদের সংস্কৃতি, নিজেদের ইজ্জ্বত-সম্ভ্রম রক্ষার জন্য প্রতিনিয়ত আন্দোলন করতে হবে।
লড়াই সংগ্রাম করেই আমাদের অধিকার আদায় করতে হবে। তাই প্রতিটি ঘরে ঘরে মা-বোনদের শক্তিশালী
হয়ে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।


তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে সেনা কর্মকর্তা লে.
ফেরদৌস গঙ কর্তৃক কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করা হয়েছিল। এ ঘটনার ২৮ বছর হতে চললেও এখনো
আমরা এর সুষ্ঠু বিচার পাইনি। এই সমাবেশে কল্পনা চাকমা অপহরণের বিচারসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে
এ যাবত সংঘটিত সকল ধর্ষণের বিচার দাবি করছি। এ সময় তিনি ২০১৬ সালে কুমিল্লায় সেনাবাহিনীর
ক্যান্টনমেন্টের ভিতর সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনারও বিচার দাবি করেন।



তিনি নারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা নারীরা
চাইলে অনেক কিছুই করতে পারি। কিন্তু শুধু ঘরে বসে থাকলেই আমাদের আন্দোলন সফল হবে না,
অধিকার আদায় হবে না।। পার্বত্য চট্টগ্রামে যে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আমরা রয়েছি তার
থেকে মুক্তির জন্য যদি লড়াই না করি তাহলে প্রতি পদে পদে আমাদেরকে অনিরাপদ হয়ে বসবাস
করতে হবে।



এন্টি চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান
সেনাশাসন বাতিল ও সেনাক্যাম্প তুলে নেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে
সেনাবাহিনী চাই না, কারণ আমরা তাদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হচ্ছি।



তিনি অবিলম্বে কাপ্তাইয়ে গণধর্ষণে জড়িত
সেনাসদস্যদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।


উজ্জ্বলা চাকমা বলেন, গত ৩ সেপ্টেম্বর
কাপ্তাইয়ে সেনাবাহিনীর সদস্য কর্তৃক এক নারী শিক্ষার্থী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। আমি
এর সুষ্ঠু বিচার চাই। ধর্ষণকারীদের কঠোর শাস্তি চাই।



তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী
কর্তৃক নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়, সেনাবাহিনী কর্তৃক জমি, বসতভিটা কেড়ে নেওয়া হয়।
সেনাবাহিনীই সবচেয়ে বেশি অশান্তি তৈরি করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।



সমাবেশ শেষে গণধর্ষণকারী সেনা সদস্যদের
কুশপুত্তলিকায় লাথি মেরে ও ঝাড়ু দিয়ে আঘাত করে কাপ্তাইয়ে ছাত্রীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদ
জানানো হয়। পরে আগুন দিয়ে ধর্ষকদের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়।







সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।




 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url