সাজেকে ঢাবি ছাত্রী দীপিতা চাকমা অপহরণ, অতঃপর মুক্তি: নেপথ্যে কারা?

বিশেষ প্রতিনিধি, সিএইচটি
নিউজ

বৃহস্পতিবার, ৭
সেপ্টেম্বর ২০২৩

দীপিতা চাকমা। সংগৃহিত ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
লোকপ্রশাসন বিভাগের একদল বাঙালি সহপাঠি/বন্ধুদের নিয়ে রাঙাামটির সাজেক পর্যটনে বেড়াতে
যাওয়ার পথে গতকাল বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাজেকের
শিজকছড়া সার্জেন্ট কামাল চত্বর এলাকা থেকে ‘‌অপহরণের’ শিকার হন দীপিতা চাকমা (২৪)
নামে ঢাবির লোকপ্রশাসন বিভাগের মাস্টার্সের এক শিক্ষার্থী। বিভিন্ন গণমাধ্যমে
“একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী’ তাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার তথ্য জানায়।



মুহুর্তের মধ্যেই উক্ত
ঘটনাটি দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। দেশের সকল মিডিয়া খবরটি প্রচারে হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
কে কার আগে খবরটি প্রচার করবে তা নিয়ে যেন মিডিয়াগুলোর প্রতিযোগীতা শুরু হয়। এতে
ছাত্রীর নামেরও গড়মিল লক্ষ্য করা যায়। কেউ ‘দ্বীপিতা’, কেউ ‘দীপিতা’ কেউ ‘দীপিকা’
হিসেবে নামটি উল্লেখ করেন।



কিন্তু প্রকৃত অর্থে
কারা অপহরণ করেছে, কেন অপহরণ করেছে, সে বিষয়ে মিডিয়াগুলো সঠিক তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়
কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে যায়। নতুবা অপহরণকারীদের আড়াল করতে এই কাজটি করা হয়।
প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এটি প্রকাশ করা হয়নি। যা রহস্যজনক।



ভুক্তভোগী ছাত্রী
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা এলাকার শীতেন্ত্র বিকাশ চাকমার মেয়ে বলে জানা গেছে।



তবে অপহরণের ৬/৭ ঘন্টা
পর গতকাল সন্ধ্যা ৭টার সময় সাজেক থানা পুলিশ অপহৃত ছাত্রীকে শিজকছড়ার
দাড়িপাড়া-উদয়পুর সড়ক এলাকার মোনআদাম থেকে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে বলে মিডিয়ার
খবরে জানা গেছে। অনেক মিডিয়া সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করার কথা বলা হলেও মূলত
যোগাযোগের মাধ্যমেই অপহরণকারীরা অপহৃত ছাত্রীকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে বলে
একটি সূত্রে জানা যায়। একাত্তর টিভির একটি খবরেও ‘অপহরণকারীদের সাথে আলোচনা চলছে,
কিছুক্ষণ পর তারা (অপহরণকারীরা) ছাত্রীকে ‘আনুষ্ঠানিকভাবে’ পুলিশের কাছে হস্তান্তর
করবে’ এমন তথ্য উল্লেখ করা হয়। এতে ঘটনাটি অনেকটা পরিকল্পিতভাবে সাজানো বলেই মনে হয়।



এই অপহরণ ঘটনাটি এমন
সময়ে ঘটানো হলো যখন রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে ৬ জন সেনা সদস্য দ্বারা এক মারমা কিশোরীকে
গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এবং তার বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। আসলে কাপ্তাইয়ে সংঘটিত
গণধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার উদ্দেশ্যে সাজেকের অপহরণ ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে কি-না
তাও দেখার বিষয়।



বস্তুত, সাজেকের যে
এলাকা থেকে দীপিতা চাকমাকে অপহরণ করা হয় সে এলাকাটি সন্তু লারমার জেএসএস-এর
সশস্ত্র গ্রুপের নিয়ন্ত্রিত এলাকা হিসেবে সকলের পরিচিত। দীর্ঘ সময় ধরে তারা
সীমান্তবর্তী উক্ত এলাকাটি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।  এটি সাজেক পর্যটন এলাকায় দায়িত্বরত
সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবিসহ সকলেই জানে। কিন্তু তারপরও কতিপয় মিডিয়া পরিকল্পিত ও
উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঘটনাস্থলের এলাকাটি ‘ইউপিডিএফ নিয়ন্ত্রিত’ উল্লেখ করে মূল অপহরণকারীদের
আড়াল করার অপচেষ্টা চালায়।



দীপিতা চাকমাকে ‘শুধুমাত্র
বাঙালি সহপাঠি/বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়ার’ কারণে অপহরণ করা হয়েছে, নাকি অন্য কোন
কারণ নিহিত রয়েছে তা জানা যায়নি। তবে তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সেই ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্তু লারমার জেএসএস সমর্থিত ছাত্রদের বেশ দাপট রয়েছে। তারা
‘ছাত্রলীগ স্টাইলে’ পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে থাকে। যদিও
অনেকে তাদের নিয়ন্ত্রণ মেনে নিতে চায় না। যারা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকতে চাইবে না
তারা তাদেরকে নিয়ন্ত্রণের জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করে থাকে। দীপিতা চাকমা অপহরণের
ঘটনাটিও এ ধরনের যোগসূত্র থাকতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন।



উক্ত অপহরণ ঘটনা সাজেক
সম্পর্কে দেশের মানুষের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এমনিতে সাজেক নিয়ে
দেশের মানুষের নানা কৌতুহল রয়েছে। 

প্রকৃত অর্থে ঘটনার নেপথ্যের কারণ ও কারা এ ঘটনায় জড়িত ছিল তা পুলিশ ও প্রশাসন নিশ্চয় জানার কথা। কারণ অপহরণকারীদের সাথে যোগাযোগ করেইতো তারা অপহৃত ছাত্রীকে উদ্ধার করেছে। তাই ঘটনাটির প্রকৃত সত্য জনসম্মুখে প্রকাশ করা জরুরী বলেই
মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল।



সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।





Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url