ঢাকায় ৩ সংগঠনের বিক্ষোভ সমাবেশ: কাপ্তাইয়ে স্কুলছাত্রী ধর্ষণে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি

ঢাকা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

রাঙামাটি কাপ্তাইয়ে সেনা সদস্যদের কর্তৃক এক পাহাড়ি স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের
ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতাপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে
পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের প্রতিষ্ঠার আপোষহীন লড়াইয়ের তিন ছাত্র-যুব-নারী সংগঠন বৃহত্তর
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ)
ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ)।




আজ শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩) বিকাল বিকাল সাড়ে ৪টায়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্য পাদদেশে তিন সংগঠনের উদ্যোগের আয়োজিত
এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বক্তারা এ দাবি জানান।




‘পাহাড়ে গোপনে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের পাঁয়তারা, রুখে দাঁড়াও
ছাত্র-যুব-নারীসমাজ’ এই শ্লোগানে অবিলম্বে ফ্যাসিবাদী সরকারের নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন, অব্যাহত
ধরপাকড়-আদালত কর্তৃক জামিনপ্রাপ্তদের কারাফটকে পুনঃগ্রেফতার বন্ধ, লংগুদুতে নিজ ছাত্রীর
ধর্ষক শিক্ষকরূপী নরপশু আব্দুর রহিমের জামিন বাতিলপূর্বক গ্রেফতার, যাবজ্জীবন সাজা
বহাল ও স্কুলে তার পুনঃনিয়োগে প্রশ্রয়দানকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবিত উক্ত সমাবেশের
আয়োজন করা হয়।




সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি জিকো ত্রিপুরা,
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমল
ত্রিপুরা ও সাংগঠনিক সম্পাদক শুভাশীষ চাকমা প্রমুখ। এসময় সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায়, গণতান্ত্রিক
ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহম্মেদ চৌধূরী।




সমাবেশে জিকো ত্রিপুরা বলেন, পাহাড়িদের ভূমি বেদখল করার
উদ্দেশ্যে ও জাতিগত দ্বন্দ্ব জিইয়ে রাখতে সরকার, রাষ্ট্রীয় বাহিনী পরিকল্পিতভাবে পার্বত্য
চট্টগ্রামে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তারই অংশ হিসেবে বর্তমানে খাগড়াছড়ি
সদর উপজেলার বিজিতলা-গামারিঢালা এলাকায় বিজিতলা ক্যাম্প কমাণ্ডার মো. ইয়াসিনের নেতৃত্বে
৩৩ পরিবার রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এছাড়াও বান্দরবানের লামা, নাইক্ষ্যংছড়িতেও
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বাড়ছে বলে মিডিয়ার মাধ্যমে জানা যাচ্ছে। এমনকি নাইক্ষ্যংছড়িতে রোহিঙ্গা
শিবির স্থাপন করার সিদ্ধান্তের কথাও একটি আলোচনায় বলেছিলেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক
ইয়াসমিন পারভীন তীবরীজি।




তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি
না হওয়া সত্ত্বেও সরকার নতুন করে ভূমি আইন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। এই আইনের দ্বারা
পাহাড়িরা নিজেদের ভূমি হারাবে, কেননা পাহাড়িদের বেশিরভাগেরই ভূমির আইনগত দ
লিল নেই,
কারণ তারা যুগ যুগ ধরে তাদের ঐতিহ্য ও প্রথাগত পদ্ধতিতেই ভূমি ভোগদখল করে আসছে। কাজেই,
এ ভূমি আইন বাতিল করতে হবে।




সমাবেশে নারী নেত্রী নীতি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ
সারাদেশে নারী নিপীড়নের ঘটনা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিনিয়ত নারী ধর্ষণ-নির্যাতন-হত্যার
ঘটনা ঘটছে। এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হচ্ছে না। আইনের ফাঁকে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে।
নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ সংগ্রাম করতে হবে।




তিনি আরো বলেন, গত ৩ সেপ্টেম্বর সকালে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে
সাদা পোশাকে ৬ জন সেনা সদস্য কর্তৃক এসএসসি পরীক্ষার্থী এক ছাত্রীকে গণধর্ষণ ও একই
দিনে রাতে খাগড়াছড়ির রামগড়ে সেটলার বাঙালি কর্তৃক এক পাহাড়ি নারীকে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা
ঘটেছে। রামগড়ের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও কাপ্তাইয়ে সংঘটিত ঘটনার
৫দিন পার হলেও ধর্ষণে জড়িত সেনা সদস্যদের চিহ্নিত কিংবা গ্রেফতার করা হয়নি। এর আগে
লংগুদুতে স্কুল ছাত্রী ধর্ষণের দায়ে নিম্ন আদালত দেওয়া যাবত জীবন কারাদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত
একই স্কুলের শিক্ষক আব্দুর রহমানতে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছে। ধর্ষণকারীদের গ্রেফতার,
যথাযথ শাস্তি প্রদান না করা মানে ধর্ষকদের পক্ষপাতিত্ব করার সামিল।


সমাবেশে ছাত্র নেতা অমল ত্রিপুরা বলেন, সারাদেশের পরিস্থিতি
এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে এখানে কোন নাগরিকের নিরাপত্তা নেই। শাসকগোষ্ঠী জনগণের ওপর
প্রতিনিয়ত দমন-পীড়ন, নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। রাষ্ট্রীয় এ নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনগণ
তথা ছাত্র সমাজকে রুখে দাঁড়াতে হবে।




তিনি আরো বলেন, পাহাড়ে সেনাশাসন জারি করে জনগণের মধ্যে
এক ভয়-ভীতকর পরিস্থিতি তৈরি করে রাখা হয়েছে। হত্যা-গুম-অপহরণ, মিথ্যা মামলা দায়ের করে
কারাগারে প্রেরণ এবং আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হবার সময় কারাফটক থেকে তুলে নিয়ে পুনঃগ্রেফতার
করা হচ্ছে। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি কুনেন্টু চাকমাকে ৪ বছরের অধিক
রাঙামাটি কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। হাইকোর্ট থেকে দুই বার জামিন নিয়ে বের হওয়ার
সময় তাকে সেনা-গোয়েন্দারা তুলে নিয়ে পুনঃগ্রেফতার করেছে। আমরা বলতে চাই দমন-পীড়ন করে
পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণের আন্দোলনকে থামাতে পারবেন না, পাহাড়ি জনগণ এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ
আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলবে। তিনি পাহাড়ে সমস্যাকে বল প্রয়োগ না করে আলোচনার মাধ্যমে
সমাধান এবং অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের দাবি পূর্ণস্বায়ত্তশাসন মেনে নিতে
সরকারে প্রতি আহ্বান জানানা।




বক্তারা, খাগড়াছড়িতে পুনর্বাসিত রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারে
ফেরত পাঠানো ও পাহাড়ে রোহিঙ্গা পুনর্বাসন বন্ধ করা, পাহাড়িদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত
করাসহ অবিলম্বে ফ্যাসিবাদী সরকারের নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন, অব্যাহত ধরপাকড়-আদালত কর্তৃক
জামিনপ্রাপ্তদের কারাফটকে পুনঃগ্রেফতার বন্ধ, লংগুদুতে নিজ ছাত্রীর ধর্ষক শিক্ষকরূপী
নরপশু আব্দুর রহিমের জামিন বাতিলপূর্বক গ্রেফতার, যাবজ্জীবন সাজা বহাল ও স্কুলে তার
পুনঃনিয়োগে প্রশ্রয়দানকারীদের আইনের আওতায় আনা এবং কাপ্তাইয়ে স্কুল ছাত্রীকে গণধর্ষণে
জড়িত সেনা সদস্যদের চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রদানের
দাবি জানান।




সমাবেশ শেষে এক বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য
থেকে শুরু হয়ে টিএসসি প্রদক্ষিণ করে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরে সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের
মাধ্যমে শেষে হয়।



সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।







Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url