পার্বত্য চট্টগ্রামে বেলুচ রেজিমেন্টের আগ্রাসন দিবসে কুদুকছড়িতে আলোচনা সভা
রাঙামাটি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
রবিবার, ২০ আগস্ট ২০২৩
পাকিস্তান বেলুচ রেজিমেন্ট কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামে আগ্রাসনের ৭৬
বছর পূর্তিতে রাঙাামটির কুদুকছড়িতে আলোচনা সভা করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট
(ইউপিডিএফ) রাঙামাটি সদর উপজেলা ইউনিট।
আজ রবিবার (২০ আগস্ট ২০২৩) “বহি:শত্রুর ধারাবাহিক আগ্রাসন, পার্বত্যবাসীর
অধিকার হরণ ও অস্তিত্বের সংকট” শীর্ষক আলোচনা সভায় ইউপিডিএফ রাঙামাটি সদর উপজেলার প্রধান
সংগঠক সচল চাকমার সভাপতিত্বে ও সংগঠক নির্নয় চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি
ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির শিল্প ও সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক সোহেল চাকমা, বিশিষ্ট
মুরুব্বী হরি কিশোর তালুকদার ও এলাকার জনপ্রতিনিধি জনেল চাকমা। এছাড়া আরও মঞ্চে উপস্থিত
ছিলেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক সমর চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র
পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি রিপন চাকমা,গনতান্ত্রিক যুব ফোরাম রাঙ্গামাটি জেলা
শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়তন চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলা শাখার
দপ্তর সম্পাদক রিতা চাকমা ও জনপ্রতিনিধিবৃন্দ।
সভা শুরুর পূর্বে এযাবৎকালে অধিকার আদায়ের
লক্ষে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের উদ্দেশ্য দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
একদল শিশু-কিশোর প্রয়াত স্নেহ কুমার চাকমার প্রতিকৃতিতে ফুলের মালা পরিয়ে
ও ফুল দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন।
সভা শুরুতে ধারাভাষ্য হিসেবে লিটন ম্যাগাজিন ‘স্ফুরণ’ এর লেখাটি পাঠ
করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তনুময় চাকমা।
বক্তারা বলেন, ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করেছিল ১৯৪৭ সালের ১৪
ও ১৫ আগস্ট। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা তাদের ২০০ বছরের শাসন-শোষণ শেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশ
থেকে চলে যাবার সময় এই দেশ দুটিকে বিভক্ত করে দিয়ে যায়। কিন্তু এই দেশভাগ পার্বত্য
চট্টগ্রামবাসীদের জন্য একটা কালো অধ্যায় হয়ে রয়েছে। ব্রিটিশরা পার্বত্য চট্টগ্রামকে
পাকিস্তানের সাথে জুড়ে দিয়ে এ অঞ্চলের জনগণের জন্য বিরাট ক্ষতিসাধন করে গেছে। ব্রিটিশদের
কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের মাত্র ৬ দিনের মাথায় ২০ আগস্ট পাকিস্তান বেলুচ রেজিমেন্ট
পাঠিয়ে সশস্ত্র আগ্রাস চালিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে দখল করে নেয়। শুরু হয় পার্বত্য
চট্টগ্রামবাসীদের জীবনে অস্তিত্ব সংকটের আরেক অধ্যায়।
বক্তারা আরো বলেন, পাকিস্তান কর্তৃক জবরদখল হওয়ার পর হতে পার্বত্য চট্টগ্রামের
সহজ সরল দুর্ভাগা জনতা আর সুখ শান্তির মুখ দেখতে পায়নি। একের পর এক লাঞ্ছনা, বঞ্চনা,
অত্যাচার নিপীড়ন আর হত্যাযজ্ঞে পাহাড়িরা আজ চরম অস্তির হুমকির মুখে পড়েছে। ১৯৭১ সালের
পর সরাসরি পাকিস্তানের শাসন অবসান হলেও নব্য পাকিস্তানিরা আজো পাহাড়ি জনগণের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন
জারি রেখেছে। বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠি পাকিস্তানি কায়দায় সামরিক শাসন বলবৎ রেখে দিন দিন
এই নিপীড়নের মাত্রা বৃদ্ধি ঘটাচ্ছে। কথিত উন্নয়নের নামে, সেনা ক্যাম্প স্থাপনের নামে
ভূমি বেদখল করে উচ্ছেদ করা হচ্ছে পাহাড়িদের। এ পরিস্থিতির উপর দাঁড়িয়ে পাহাড়িদের আজ
লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হচ্ছে অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে।
সভায় বক্তারা আরো বলেন, আমাদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সঠিক ইতিহাস জানতে
দেওয়া হয় না। পাঠ্যপুস্তকে পাহাড়ি জনগণের বীরত্বপূর্ণ ইতিহাসের কথা লেখা নেই। কিন্তু
আমাদের রয়েছে মুঘল, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াইয়ের মতো বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস।
মুঘলদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া কামান এখনো রাঙামাটি রাজবাড়িতে সংরক্ষিত আছে। কাজেই, আমাদের
নতুন প্রজন্মকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে গিয়ে ইতিহাস সন্ধান করতে হবে। মনে রাখতে
হবে, সঠিক ইতিহাস জানা থাকলেই কেবল আমরা গর্বিতভাবে জাতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।
সভা শেষে কিশোর-কিশোরীরা বেলুচ রেজিমেন্টের কুশপুত্তলিকায় ঝাড়ু দিয়ে
ও বল্লম দিয়ে আঘাত করে পার্বত্য চট্টগ্রামে আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।